সেইসব পাখা শিল্পীদের এইসব দিনরাত্রি

লিখেছেন লিখেছেন এফ শাহজাহান ০৮ জুন, ২০১৩, ১১:১১:২০ সকাল



ক্রমেই গরম হচ্ছে পৃথিবী। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবের শিকার বাংলাদেশের অসহনীয় উষ্ণতাও বাড়ছে প্রতিবছর। বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিং আর প্রচন্ড গরমে যখন হাঁসফাঁস অবস্থা, তখন হাতপাখাই যেন শেষ ভরসা। তালপাতার তৈরী সেই হাতপাখা বানানোর ধুম পড়েছে বগুড়ার বিখ্যাত পাখা পল্লীতে। রাতদিন কঠোর পরিশ্রম করছেন তালপাখার শিল্পীরা। সেখানকার নারী পুরুষ ছোট বড় সবাই এখন মহাব্যস্ত। মানুষের ঘামঝরা তপ্ত শরীর শীতল করতে পাখা শিল্পীরা রাতদিন নিজেদের ঘাম ঝরিয়ে তৈরী করছেন রং-বেরংয়ের নানা ডিজাইনের তালপাখা। পাখা বানিয়েই চলছে তাদের জীবন ও জীবীকা। বগুড়ায় তৈরী এসব পাখার কদরও বাড়ছে সারাদেশে। আর এ গ্রামের ছোটবড় নারী পুরুষ সবাই পাখা বানানোকেই নিজেদেও জীবীকা নির্বাহের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এজন্য এই গ্রাম সারাদেশে পাখা গ্রাম নামেই পরিচিত। এখানকার সেইসব পাখা শিল্পীদের দিনকাল কেমন কাটছে তাই জানুন আজকের ব্লগিংয়ে।

বগুড়া শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত যোগীরভবন গ্রাম। কাহালু উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এই গ্রামের নামকরন হয়েছিল যোগীরভবন নামের একটি মন্দিরের জন্য। সেখানে যোগী বা সন্যাসীরা এসে ধ্যান ও পূজা অর্চনা করতেন। সেই নিদর্শনটি এখনও বয়ে চলেছে গ্রামটি। কিন্তু অতীতের সেই ঐতিহ্যকে পিছনে ফেলে এই গ্রাম এখন সারাদেশে পাখা পল্লী নামেই বেশি পরিচিত। অনেকেই চেনে তালপাখার গ্রাম নামে। এই গ্রামের নারী-পুরুষ শিশু-কিশোর সবাই জড়িয়ে আছে পাখা তৈরির সঙ্গে। এখানকার পাখার যেমন সুনাম আছে চাহিদাও তেমন বেশি।

পাখা পল্লীতে কারো এখন অবসর নেই। রাতদিন কাজ করেও তারা চাহিদা মেটাতে পারছেন না। রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে তালপাতা সংগ্রহ করে এনে, সেসব পাতা শুকিয়ে নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মনকাড়া সুন্দর সুন্দর পাখা তৈরি হচ্ছে। সেখান থেকে এসব পাখা নানা হাতঘুরে রাজধানীসহ পৌঁছে যাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে । দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাড়ী ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পাখা নিয়ে বিক্রি করছেন সারাদেশে।

গ্রীষ্মের শুরু থেকেই এই গ্রামের মানুষদের নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকেনা। কেউ তালপাতা কিনে আনছে। কেউ তা কেটে পাখা তৈরির উপযোগি করছে, কেউ মুড়ি সেলাই করছে, কেউ রঙ করছে, আবার কেউ বা বাঁশের খিলাল তৈরি করছে। এতোসব কাজের কারণে নারী-পুরষের পাশাপাশি শিশু-কিশোরাও খেলাধুলা ফেলে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে পাখা তৈরীতে । এইকাজে একদিকে যেমন বাড়তি টাকা উপার্জন হচ্ছে, অন্যদিকে অভাব মোচনের সম্ভাবনাময় পথও খুজে পেয়েছেন তারা। এখানকার আয় দিয়েই চলছে সংসার ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ।

প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের যুগে অনেক কুঠির শিল্পের কদর কমে গেলেও হাতপাখার কদর কমেনি। সরকারী সহায়তা পেলে এই শিল্পের সাথে জড়িতরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি বিকশিত হবে দেশের পিছিয়ে পড়া কুঠির শিল্প এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।

বিষয়: বিবিধ

১৪৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File